টাইটানিক (Titanic) মুভি রিভিউ (Movie Review)

jamiul haque
3 minute read
0

টাইটানিক (Titanic): একটি চিরসবুজ প্রেম ও ট্র্যাজেডির কাহিনি

ভূমিকা

১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত "টাইটানিক" শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি একটি আবেগ, ভালোবাসা ও দুঃখের এক অবিস্মরণীয় উপাখ্যান। পরিচালনায় ছিলেন জেমস ক্যামেরন, আর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও (জ্যাক ডসন) ও কেট উইন্সলেট (রোজ বুকেটার)। বাস্তব ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই মুভি প্রেম, সামাজিক বৈষম্য ও ভাগ্যের নির্মমতাকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।



সিনেমার প্লট: একটি চিরন্তন প্রেমের গল্প

বর্তমান থেকে অতীতে ফিরে যাওয়া

সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, সমুদ্র বিজ্ঞানী ব্রক লাভেট ও তার দল টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো "হার্ট অব দ্য ওশান" নামে পরিচিত এক মূল্যবান নীল হীরা উদ্ধার করা। এই অনুসন্ধানের সময়ই তাদের সামনে আসেন ১০১ বছর বয়সী বৃদ্ধা রোজ ডিউইট বুকেটার, যিনি টাইটানিক ট্র্যাজেডির একজন জীবিত সাক্ষী। তিনি ধীরে ধীরে তার অতীতের স্মৃতিচারণা শুরু করেন।

টাইটানিকের যাত্রা: দুটি ভিন্ন জগতের মানুষের মিলন

১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও বিলাসবহুল জাহাজ "আরএমএস টাইটানিক" ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই জাহাজে ছিল সমাজের দুই শ্রেণির মানুষ— ধনী ও দরিদ্র।

প্রথম শ্রেণি: ধনী, ক্ষমতাবান ও অভিজাত ব্যক্তিরা। রোজ ও তার মা রুথ বুকেটার এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, এবং রোজের বাগদত্তা ক্যাল হক্লি এক প্রতাপশালী ব্যবসায়ী।

তৃতীয় শ্রেণি: স্বপ্নবাজ গরিব মানুষ, যারা আমেরিকায় নতুন জীবন শুরু করতে চায়। জ্যাক ডসন, এক মেধাবী চিত্রশিল্পী, ভাগ্যের জোরে এক বাজিতে টাইটানিকের তৃতীয় শ্রেণির টিকিট জেতে।

রোজ তার জীবন নিয়ে হতাশ। ধনী পরিবারে জন্ম নিয়েও সে মানসিকভাবে বন্দী অনুভব করে। সে একদিন জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিতে চায়, কিন্তু জ্যাক তাকে বাঁচায়। এখান থেকেই তাদের সম্পর্কের সূচনা।

প্রেম, সংকট ও সামাজিক বৈষম্য

জ্যাক ও রোজের প্রেম ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে। জ্যাক রোজকে শেখায় কীভাবে স্বাধীনভাবে জীবন উপভোগ করতে হয়। এক রাতে তারা একসঙ্গে নাচে, হাসে, ভালোবাসায় মেতে ওঠে। রোজ তার ধনী বাগদত্তাকে অগ্রাহ্য করে এবং জ্যাকের প্রেমে পড়ে।

এই সম্পর্ক ধনী সমাজ মেনে নিতে পারে না। ক্যাল হক্লি রোজকে বাধ্য করতে চায় তার সাথে থেকে যেতে এবং জ্যাককে অপমান ও ফাঁসানোর চেষ্টা করে।

এই সময়, জ্যাক রোজের একটি ছবি আঁকে, যেখানে সে শুধু একটি নীল হার (হার্ট অব দ্য ওশান) পরে থাকে। এটি সিনেমার অন্যতম রোমান্টিক দৃশ্য।


টাইটানিকের ট্র্যাজেডি: এক হৃদয়বিদারক বিপর্যয়

১৪ এপ্রিল ১৯১২, রাত ১১:৪০ মিনিট। টাইটানিক বরফখণ্ডের (Iceberg) সাথে ধাক্কা খায়।

জাহাজে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে।  প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের লাইফবোটে তোলা হয়, আর নিম্নবিত্তদের আটকে রাখা হয়। রোজ লাইফবোটে ওঠার পরিবর্তে জ্যাকের সাথে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। জ্যাককে চুরির দায়ে ফাঁসানো হয়, কিন্তু রোজ তাকে বাঁচায়।

শেষ পর্যন্ত, জাহাজ দুই ভাগ হয়ে ডুবে যায়।

জ্যাক ও রোজ ঠান্ডা সমুদ্রে ভাসতে থাকে। জ্যাক রোজকে একটি কাঠের দরজার ওপর রাখে, যাতে সে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু জ্যাক প্রচণ্ড ঠান্ডায় জমে মারা যায়।

রোজের বিখ্যাত সংলাপ: "I'll never let go, Jack."

শেষ পর্যন্ত, উদ্ধারকারী দল আসে, আর রোজ বেঁচে যায়। সে নিজের নতুন পরিচয় নেয়— রোজ ডসন, এবং ক্যাল বা তার পুরনো জীবনকে আর কখনো খুঁজে না নেয়।


অতীত থেকে বর্তমান: ভালোবাসার চূড়ান্ত আত্মত্যাগ

বৃদ্ধ রোজ তার গলার হারটি (হার্ট অব দ্য ওশান) গভীর সমুদ্রে ফেলে দেয়, যেন সেটি চিরতরে জ্যাকের স্মৃতির সঙ্গে থেকে যায়। এটি বোঝায় যে জীবনের প্রকৃত মূল্যবোধ টাকার চেয়ে অনেক বেশি।


বিখ্যাত সংলাপ ও মুহূর্ত

"I'm the king of the world!" – জ্যাক  
"You jump, I jump, remember?" – রোজ   
"I'll never let go, Jack." – রোজ


মুভির সাফল্য ও জনপ্রিয়তা

১১টি অস্কার পুরস্কার  (সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা সঙ্গীত, ইত্যাদি)  সেলিন ডিওনের 'My Heart Will Go On' গানটি আইকনিক হয়ে যায়।  $২.২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে, যা একসময় সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমা ছিল।


মুভির শিক্ষা ও বার্তা

ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের শক্তি  জীবনের অনিশ্চয়তা ও মুহূর্ত উপভোগ করা। সামাজিক বৈষম্যের নির্মম চিত্র টাকার চেয়ে ভালোবাসার মূল্য অনেক বেশি।


উপসংহার

"টাইটানিক" শুধুমাত্র একটি প্রেমের গল্প নয়, এটি জীবন, ভাগ্য, শ্রেণীবিভাজন ও মানুষের অনুভূতির প্রতিচ্ছবি। সিনেমাটি যুগ যুগ ধরে দর্শকদের হৃদয়ে থাকবে।

মুভিটি দেখতে ইউটিউবে সার্চ দিন- titanic movie 1997 full movie

এছাড়া মুভিটির বাংলা ডাবিং দেখতে চাইলে অথবা ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

যদি জ্যাক বেঁচে থাকতো তবে তাদের ভবিষ্যৎ কেমন হতো? মন্তব্যে জানান!

Tags:

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)