তোমার অপেক্ষায়। একটি কষ্টের প্রেমের উপন্যাস।

jamiul haque
9 minute read
0

অপেক্ষার শুরু

নীলয় জানে, অপেক্ষা কষ্টের। কিন্তু সে কখনো ভাবেনি যে অপেক্ষা এতটা দীর্ঘ হতে পারে। রাতের শহর শান্ত, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে নীলয় আবারও একবার ফোনটা দেখল। তিথির শেষ মেসেজ:

"আমাকে খুঁজে পাবে তো?"



সেই তিন বছর আগে, যখন তিথি চলে গিয়েছিল, তখনও নীলয় জানত না, সত্যিকার অর্থে হারিয়ে ফেলা কাকে বলে। আজ, এত বছর পর, পুরোনো সেই বার্তার দিকে তাকিয়ে তার মনে হলো, তিথির দেওয়া প্রশ্নের উত্তর আজও সে জানে না।


সে কি সত্যিই তাকে খুঁজে পাবে? নীলয় জানে, খোঁজা মানেই পাওয়া নয়। কিন্তু কিছু ভালোবাসা থাকে, যা কখনোই ফুরিয়ে যায় না। এরপর চোখ বন্ধ করে মনে করতে চাইল, সবকিছু কেমন করে শুরু হয়েছিল।


প্রথম দেখা

চার বছর আগে, এক শীতের সকালে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে প্রথমবারের মতো দেখা হয়েছিল নীলয় আর তিথির। নীলয় তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, সবকিছুই যেন একটু অচেনা লাগছিল। সেদিন লাইব্রেরিতে বসে একটা বই পড়ছিল সে। হঠাৎ সামনের টেবিলে একটা বই রাখা হলো।


— “এই বইটা কি তুমি পড়েছ?”


সেই মিষ্টি কণ্ঠস্বর, এক অচেনা মেয়ে। লম্বা খোলা চুল, চোখে গভীরতা, আর ঠোঁটের কোণে এক টুকরো হাসি।


— “না, পড়িনি।”


— “তাহলে পড়ে দেখো। ভালো লাগবে।”


মেয়েটি বইটা দিয়ে চলে গেল। নীলয় তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর বইয়ের নাম দেখল— "দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস।"


সেদিন সে জানত না, এই বইটাই তার জীবনে এক নতুন গল্পের শুরু করে দেবে।


বন্ধুত্বের গল্প

কয়েক সপ্তাহ পর, আবারও দেখা হয়েছিল তাদের। সেদিন নীলয় ক্লাস শেষে লাইব্রেরির করিডোরে বসে ছিল। তখনই পাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠ—


— “কী, বইটা পড়েছ?”


নীলয় তাকিয়ে দেখল, সেই একই মেয়ে।


— “হ্যাঁ, পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে।”


মেয়েটি হাসল।


— “তাহলে বলো তো, গল্পের শেষটা কেমন ছিল?”


নীলয় একটু ভেবে বলল,

— “দুঃখজনক। কিন্তু বাস্তব।”


মেয়েটির হাসি কিছুটা ম্লান হলো।


— “সব গল্পের শেষ কি দুঃখজনক হয়?”


নীলয় কাঁধ ঝাঁকালো।


— “হয়তো না। কিন্তু কিছু ভালোবাসা থেকে যায়, শেষ না হলেও।”


মেয়েটি চুপ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল নীলয়ের দিকে। তারপর বলল,

— “আমি তিথি। আর তুমি?”


— “নীলয়।”


সেই থেকে বন্ধুত্ব শুরু হলো। তারা প্রতিদিন দেখা করত না, কিন্তু যখন করত, তখন সময় কোথা দিয়ে কেটে যেত, বোঝা যেত না।


অনুভূতির পরিবর্তন

সময় কেটে যাচ্ছিল। নীলয় আর তিথি প্রতিদিন একসঙ্গে সময় কাটাতো। কখনো ক্লাসের পর আড্ডা, কখনো ক্যান্টিনে বসে গল্প, আবার কখনো শহরের রাস্তায় নীরবে হাঁটা। তিথি ছিল খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। হাসতো কম, কিন্তু যখন হাসতো, তখন মনে হতো চারপাশের সবকিছু যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।


নীলয় ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিল, তিথির জন্য তার অনুভূতি বদলে যাচ্ছে। একদিন রাতে, নীলয় একা বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল—

"এটা কি বন্ধুত্ব, নাকি তার চেয়ে বেশি কিছু?"


সে নিজেকেই উত্তর দিতে পারছিল না।


স্বীকারোক্তি

একদিন বিকেলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাগানে বসে ছিল তারা। হঠাৎ নীলয় বলল,

— “তিথি, তুমি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?”


তিথি চুপ করে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে বলল,

— “ভালোবাসা কি সত্যিই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে?”


নীলয় একটু অবাক হলো।

— “মানে?”


তিথি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

— “মানুষ চাইলেই তো কাউকে ভালোবেসে ফেলতে পারে না, তাই না?”


নীলয়ের মনে হলো, তিথি কিছু লুকাচ্ছে। সে কি কাউকে ভালোবাসে? সে কি কাউকে হারিয়েছে? কিন্তু নীলয় কিছু জিজ্ঞেস করল না। কারণ কিছু উত্তর সময়ের সঙ্গে নিজেই এসে যায়।


সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

দিনগুলো গড়াতে লাগল। নীলয় তিথিকে ভালোবাসতে শুরু করেছে, কিন্তু সে নিজের অনুভূতিগুলোকে স্বীকার করতে ভয় পাচ্ছিল। তিথি যেন তার মনের খবর জানে, কিন্তু কখনো কিছু বলে না।


একদিন তারা একটি বইয়ের দোকানে গিয়েছিল। সেখানে একটি বই দেখে তিথি বলল,

— “এটা পড়েছ?”


নীলয় বইটির দিকে তাকিয়ে বলল,

— “না, কিন্তু শুনেছি ভালো।”


তিথি বইটি হাতে নিয়ে পড়া শুরু করল। তার চোখে কিছু একটা ছিল, যেন সে বইয়ের গল্পে হারিয়ে গেছে।


নীলয় নিজেকে কিছুটা অসহায় মনে করল।

— “তুমি কি কখনো মনে করো, আমাদের বন্ধুত্বের বাইরে কিছু হতে পারে?”


তিথির চোখে এক মুহূর্তের জন্য শঙ্কা দেখা গেল।

— “আমাদের বন্ধুত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। নীলয়, কখনো কখনো বন্ধুত্বকেও ভালোবাসা বলা হয়।”


নীলয় বুঝতে পারল, তিথি কিছু না বলার মধ্যে খুব গভীর একটা সত্য লুকিয়ে রেখেছে।


দূরত্বের অনুভূতি

কিছুদিন পর তিথি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। নীলয় শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেল।

— “তুমি কেন?”


— “একটা ভালো চাকরি পেয়েছি। আমার স্বপ্নের শহরে যেতে হবে।”


নীলয় অস্থির হয়ে উঠল।

— “কিন্তু তুমি তো আমাকে এখানে রেখে যেতে পারো না!”


— “আমি ফিরে আসবো, নীলয়।”


কিন্তু নীলয়ের মনে হলো, ফিরবে কি না, সেটা জানে না কেউ।


দিনগুলি যেন ঘড়ির কাঁটার মতোই অচল হয়ে গেল। তিথি চলে যাওয়ার দিন যখন আসে, নীলয় অনুভব করে, কিছু হারানোর আগে তাকে আবার একবার জানাতে হবে।


বিচ্ছেদ

তিথির চলে যাওয়ার দিন, রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে নীলয় কাঁদছিল।

— “তিথি, তুমি কি আমাকে ভুলবে?”


তিথি চোখের জল মুছতে মুছতে বলল,

— “আমি চেষ্টা করবো না। তুমি আমার জীবনের অংশ।”


— “এটা কি তোমার শেষ কথা?”


তিথি কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।

— “আমি চাইবো, তুমি আমাকে খুঁজে বের করো।”


নীলয়ের হৃদয় ভেঙে গেল। সে জানতো, তিথি দূরে চলে গেলে, তার স্মৃতিগুলোও ধীরে ধীরে মুছে যাবে।


একাকীত্ব

তিথির চলে যাওয়ার পর নীলয় একাকীত্ব অনুভব করতে লাগল। বই পড়া, গান শোনা, সবকিছু তার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে উঠল।


কখনো কখনো রাতের বেলা তার ফোনটা দেখতে দেখতে ভেবেছে, যদি তিথি একদিন ফেরত আসে। কিন্তু তা কখনোই হয়নি।


একদিন, তিথির কাছ থেকে একটি বার্তা পেল—

"আমি তোমাকে ভুলে যেতে চাইছি, কিন্তু আমার হৃদয় প্রতিদিন তোমার জন্য কাঁদছে।"


নীলয়ের মন আবার রক্তাক্ত হয়ে উঠল।


খুঁজে পাওয়া

বছর কেটে গেল। নীলয় নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে চেষ্টা করছিল। তিথির কথা ভুলে যাওয়ার জন্য অনেক কিছু করেছে, কিন্তু কিছুই কাজ করেনি।


একদিন নীলয় একটি কফিশপে বসে ছিল। হঠাৎ টিভিতে একটি খবর দেখল—

"একটি নতুন ফিল্মে অভিনয় করছেন তিথি।"


তার হৃদয় হুহু করে উঠল। তিথির দিকে তাকিয়ে থাকল।

— “এটা কি সম্ভব?”


নীলয় ধীরে ধীরে তার দিকে এগিয়ে গেল।

— “তিথি!”


তিথি মাথা তুলে তাকালো।

— “নীলয়?”


তাদের দুজনের চোখে এক ধরনের আশ্চর্য্যতা।

— “তুমি এখানে?”


— “আমি তো তোমাকে খুঁজছি!”


পুনর্মিলন

অবশেষে, নীলয় আর তিথি আবারও মুখোমুখি। তাদের অনুভূতিগুলো এতদিন পরেও অপরিবর্তিত ছিল।

— “তুমি কি এখনও আমাকে ভালোবাস?”


— “অবশ্যই।”


নীলয় কিছুটা সংকোচ বোধ করছিল।

— “আমি তোমাকে হারাতে পারি না।”


তিথি তাকে ধীরে ধীরে আলিঙ্গন করল।

— “আমাদের সম্পর্ক ফিরে আসতে পারে?”


নীলয় নিশ্চিত হয়ে বলল,

— “হ্যাঁ, আমি প্রতিজ্ঞা করছি। তবে কিছু সময় লাগবে।”


নতুন সূচনা

তারা আবার একসঙ্গে হওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু সম্পর্কের মধ্যে কিছু বাধা ছিল।


নীলয় আর তিথির জীবনযাত্রা, স্বপ্ন ও চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে ব্যবধান ছিল। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নিল, সব কিছুর মধ্যেই একে অপরকে খুঁজে বের করবে।


দিনগুলো চলতে লাগল। একদিন নীলয় বলল,

— “তিথি, তুমি যদি আবার চলে যাও, আমি কী করব?”


তিথি একটু চুপ হয়ে গেল।

— “তবে তুমি আমাকে যেতে দেবে না, তাই না?”


নীলয় আস্তে আস্তে বলল,

— “আমি চেষ্টা করবো।”


ভবিষ্যতের আশায়

সময় চলতে থাকল। নীলয় আর তিথির সম্পর্কটি আরও গভীর হতে লাগল। তারা নিজেদের সাফল্য, ব্যর্থতা, আশা এবং স্বপ্ন শেয়ার করতে শুরু করল।


একদিন, তিথি বলল,

— “তুমি কি কখনো ভাবছ, আমরা কোথায় যাচ্ছি?”


— “হ্যাঁ। আমি ভবিষ্যৎ দেখতে চাই।”


তিথি তাকে চেয়ে রইল।

— “তুমি কি ভাবছ?”


— “বিষাদ নয়, আনন্দের দিকে। আমি তোমার পাশে থাকতে চাই।”


তিথি তার হাত ধরে বলল,

— “আমি তোমার পাশে থাকবো।”


বিপদের আগমনে

কিন্তু জীবন সহজ ছিল না। একদিন নীলয়ের জীবনে এক চরম বিপদ এসে হাজির হল।


নীলয়ের পরিবারে এক অঘটন ঘটে গেল। তার বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন।


নীলয়কে দ্রুত বাড়িতে ফিরে যেতে হলো। তিথি তার পাশে থাকার চেষ্টা করল, কিন্তু নীলয় চাপা কষ্ট নিয়ে তাকে দূরে ঠেলে দিল।


— “এখন তুমি কিছু করতে পারবে না। তুমি চলে যাও!”


তিথির চোখে জল চলে এলো।

— “আমি তোমার পাশে আছি।”


বিচ্ছিন্নতা

নীলয়ের মনে হলো, সে এখন একা। পরিবারের চাপ, দায়বদ্ধতা এবং তিথির প্রতি অপর্যাপ্ততা।


একদিন, নীলয় তার মায়ের কাছে বলল,

— “মা, আমি কি একটা বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারি?”


— “তুমি কি বলতে চাও?”


— “আমি তিথিকে বিয়ে করতে চাই।”


তাঁর মা কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন।

— “তুমি কি নিশ্চিত?”


— “হ্যাঁ, আমি তাকে ভালোবাসি।”


নতুন সিদ্ধান্ত

নীলয় এবার সিদ্ধান্ত নিল, যে তার জীবনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।


তিনি তিথির সঙ্গে আলাপ করতে চাইছিলেন, কিন্তু প্রতিদিন নতুন সমস্যা সামনে আসছিল।


একদিন নীলয় সিদ্ধান্ত নিল, সে তিথির কাছে যাবে এবং তার জীবন সম্পর্কে আলাপ করবে।


— “তিথি, তুমি কি আমার জীবনের অংশ হতে চাও?”


তিথির মুখে একটি অস্পষ্ট হাসি।

— “আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।”


বাস্তবতার সম্মুখীন

কিন্তু সম্পর্কের বাস্তবতা তাদের অপেক্ষা করছে। নীলয় বুঝতে পারল, এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রস্তুত হওয়া সহজ নয়। তিথির সঙ্গে জীবন শুরু করতে হলে, তাকে নিজের মনোভাব পরিষ্কার করতে হবে।

— “তিথি, আমাদের সম্পর্ক নিয়ে আমি খুব চিন্তিত।”


তিথি একটু বিষণ্ণ হয়ে বলল,

— “কেন, নীলয়?”


— “আমি তোমাকে ভালোবাসি, কিন্তু পরিবার, ক্যারিয়ার, সবকিছু একসাথে মিলানো কঠিন।”


— “তুমি ভয় পাচ্ছ?”


— “হ্যাঁ। আমি ভয় পাই যে, যদি আমি তোমাকে হারাই?”


তিথি এক মুহূর্ত চুপ রইল। তারপর বলল,

— “আমি তোমার সঙ্গে আছি, নীলয়। আমি তোমার সাফল্যের জন্য অপেক্ষা করবো।”


আশা ও ভেঙে পড়া

দিনগুলো চলে গেল, নীলয়ের বাবা ধীরে ধীরে সুস্থ হচ্ছিলেন। কিন্তু নীলয় নিজের জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা করছিল। কাজের চাপ, পরিবার, তিথির প্রতি দায়িত্ব—সব কিছু একসঙ্গে নিতে পারছিল না।


একদিন, তার চাকরির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগে রাতে সে ঘুমোতে পারল না।

— “তিথি, আমি প্রস্তুত না।”


— “তুমি পারবে, নীলয়। তুমি সবসময়ই পারো।”


— “তুমি যদি এখানে থাকতে।”


তিথির মুখে গভীর শোক।

— “আমি তোমার পাশে আছি। তুমি কেবল চেষ্টা কর।”


জয়ের স্বাদ

পরীক্ষা শেষে নীলয় যখন ফলাফল দেখতে গেল, তার হৃদয় কাঁপছিল।

— “জয়ী হয়েছি!”


সে আনন্দে ভরে গেল। তিথিকে ফোন করে বলল,

— “তিথি, আমি সফল!”


— “আমি জানতাম, তুমি পারবে।”


এটি একটি নতুন শুরু। নীলয় এবং তিথির সম্পর্ক আরও গভীর হতে শুরু করল। তারা একসাথে নতুন পরিকল্পনা করতে লাগল।


নতুন চ্যালেঞ্জ

কিন্তু সুখের দিনগুলি খুব বেশিদিন স্থায়ী হলো না। নীলয়ের মা অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং পরিবারে নতুন চ্যালেঞ্জ আসতে শুরু করল।

— “আমি তোমার পাশে থাকতে পারছি না। আমি সবকিছু পরিচালনা করতে পারছি না।”


তিথি বোঝাতে চেষ্টা করল,

— “তুমি কি ভেবেছ, আমরা একসঙ্গে এই কষ্টকে পার করতে পারি?”


— “আমি কি তোর জন্য সময় দিতে পারব? আমার পরিবার এখন আমার প্রয়োজন।”


সম্পর্কের পরীক্ষা

নতুন চ্যালেঞ্জগুলো তাদের সম্পর্ককে কঠিন করে তুলছিল। নীলয় মাঝে মাঝে তিথির সাথে সময় কাটাতে পারছিল না।

— “তিথি, আমি দুঃখিত। আমি তোমার জন্য সময় বের করতে পারছি না।”


তিথি হতাশ হয়ে বলল,

— “তুমি কি বুঝতে পারছ, আমি তোমাকে খুব মিস করছি?”


— “আমি জানি, কিন্তু...”


— “কিন্তু তুমি কি আমাকে সত্যি ভালোবাস?”


ভাঙনের সম্মুখীন

একদিন নীলয় সিদ্ধান্ত নিল, তাদের সম্পর্ক নিয়ে আবার আলোচনা করতে হবে।

— “তিথি, আমি কিছু বলতে চাই।”


তিথি ভেবেচিন্তে বলল,

— “হ্যাঁ, বল।”


— “আমি মনে করি, আমাদের কিছু সময়ের জন্য আলাদা হওয়া উচিত।”


তিথির চোখে অশ্রু।

— “এটা কি আমাদের সম্পর্কের শেষ?”


— “আমি জানি না, কিন্তু আমি তোমাকে ভুলতে চাই না।”


বিচ্ছিন্নতার কষ্ট

তিথি চলে গেল। নীলয় তার জীবন থেকে এক টুকরো সুখ হারাল।

— “আমি কি ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম?”


নীলয় প্রতিদিন তিথির কথা মনে করে। সে বুঝতে পারল, ভালোবাসা শুধু শরীরের কাছে থাকার নাম নয়, মনে একে অপরের কাছে থাকা।


অদৃশ্য সংযোগ

দিনগুলো কেটে যেতে লাগল। নীলয় একাকী কাটাচ্ছিল। তিথির কোনো খবর পাচ্ছিল না।

— “আমরা কি ভুলে যাব?”


কিন্তু হারানোর অনুভূতি তাকে প্রতিদিন তিথির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসছিল।

— “তিথি, তুমি কি আমার জীবনে আবার ফিরবে?”


ফিরে আসা

একদিন, হঠাৎ করে তিথির ফোন এল।

— “নীলয়?”


— “তিথি!”


— “আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাই।”


তারা আবার দেখা করল।

— “আমাদের সম্পর্ক কি ফিরে আসতে পারে?”


তিথি সোজা চোখে তাকিয়ে বলল,

— “হ্যাঁ, কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”


নতুন সূচনা

নীলয় এবং তিথি আবার একসঙ্গে হওয়ার চেষ্টা করল। তাদের সমস্যা ছিল, কিন্তু তারা একে অপরের পাশে থাকার চেষ্টা করল।

— “আমাদের সবকিছু মোকাবেলা করতে হবে।”


— “হ্যাঁ, এবং আমি তোমার পাশে আছি।”


সম্পর্কের শক্তি

বছর কেটে গেল। তারা একে অপরের জন্য নতুন ভবিষ্যত তৈরি করতে লাগল।

— “আমরা আমাদের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করব।”


নতুন সম্পর্কের ভিত্তি

বছরের শেষে, নীলয় এবং তিথি একটি নতুন সিদ্ধান্ত নিল।

— “আমি তোমার সাথে জীবন কাটাতে চাই।”


— “আমিও।”


সেদিন তারা দুজন মিলে একটি নতুন জীবন শুরু করল।


ভালোবাসার শক্তি

বছর শেষে, তারা বুঝতে পারল, সম্পর্কের শক্তি শুধু একে অপরকে ভালোবাসার মধ্যে নয়, বরং একসাথে থেকে সবকিছু মোকাবেলা করার মধ্যে।

— “ভালোবাসা কখনো হারায় না। এটা সবসময় আমাদের মধ্যে থেকে যায়।”


তারা জানে, আগামীকাল নতুন দিন, নতুন শুরু।

— “আমি তোমার জন্য সবকিছু করবো।”


শেষ কথা

নীলয় আর তিথির গল্পটি তাদের জীবনকে বদলে দিয়েছে। তাদের ভালোবাসার গল্প, যেখানে কষ্ট ছিল, কিন্তু ছিল আশা। তারা জানে, একসাথে থাকার জন্য কিছু বাধা অতিক্রম করতে হয়, কিন্তু ভালোবাসা সবসময় তাদের মধ্যে একটি অদৃশ্য শক্তি সৃষ্টি করেছে।

Tags:

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)